বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ৮৬ কিলোমিটার অরক্ষিত থাকায় ওই এলাকা দিয়ে চোরাকারবারি ও সন্ত্রাসি গ্রুপ গুলো। এই সীমান্ত এলাকা দিয়েই অবাধে যাতায়াতসহ নানা অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে থাকা সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব মাঝে মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে সৌহার্দ্যরে সম্পর্কে ছিড় ধরছে।
দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে বিগত দেড়বছরে বিজিবি-বিজিপি অন্তত ১৫টি পতাকা বৈঠক করলেও অরক্ষিত সীমান্তের বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি।
সূত্র মতে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের জের ধরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্গন করে সন্ত্রাসি আটকের চেষ্টা করে। এভাবেই দিনকে দিন এই ধরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে গোয়েন্দারা উল্লেখ করেছেন।
ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সঙ্গে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদারে দুইদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্টানেরও সুপারিশ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ামমারের মধ্যবর্তী সীমান্তের অরক্ষিত ৮৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন সন্ত্রাসি সংগঠনের সশস্ত্র কার্যকলাপ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝে মধ্যেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসি সংগঠন আরকান আর্মি, আরকান লিবারেশন আর্মি ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর হামলাসহ নানা অপতৎপরতার কারণে সে দেশের সেনাবাহিনী এসব সন্ত্রাসিদের গ্রেপ্তারে বেশ কয়েকবার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্গন।
সূত্র মতে, ওই সব এলাকায় ১৫টি সীমান্ত চৌকি (বিওপি) স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নও (বিজিবি) বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতেই বিজিবিকে এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসি গোষ্টি বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার এবং ঊভয় দেশের সম্পর্ক বজায় রাখতে বিগত দেড়বছরে বিজিবি-বিজিপি পর্যায়ে ১৫টি বৈঠক-সৌজন্য সাক্ষাত হয়েছে। এছাড়াও সামরিক অ্যাটাশে পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপ গুলো বারবার অবহিত করা হয়েছে। তথাপি সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কিছু ব্যবধান রয়েই গেছে।
ওই প্রতিবেদন মতে, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশের কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে ঊভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান পর্যায়ে বৈঠক এবং সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের শুভেচ্ছা বৈঠকের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এ প্রসংগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে শুভেচ্ছা সফরের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে সফরের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে।’
এদিকে সীমান্তের অরক্ষিত এলাকার একাংশের দায়িত্বপালনকারি ৩১ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) প্রধান লে. কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম জানান, তাঁর দায়িত্বরত অরক্ষিত এলাকা দিয়ে কোন সন্ত্রাসির যাতায়াত বা আশ্রয়-প্রশ্রয় বিষয়ে সজাগ আছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোন অনৈতিক বিষয় বাংলাদেশ কঠোর হস্তে দমন করে সব সময়। আর মিয়ানমারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সব সময় আন্তরিক।’
সূত্র: কক্সবাজার
পাঠকের মতামত